Share this link via
Or copy link
সৌমেন সুর: বারাসাত স্টেশন, চারদিকে মানুষের কর্মব্যস্ততা। রেলের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমের ঘোষণা ঠিকমতো কানে আসছে না। কারণ অন্য মাইকে ভেসে আসা চটুল গানের সমন্বয়ে মানুষ জেরবার। ওভার ব্রিজের কাছ ঘেঁষে সিঁড়ির সামনে শীর্ণকায় প্রায় অর্ধনগ্ন এক মা। শতছিন্ন কাপড়ে কোনওক্রমে আব্রু ঢাকা। কোলের কাছে একটা শিশু। খিদে পেটে খাবার না পেয়ে হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্য একটি শিশুর হাতে তোবড়ানো অ্যালুমিনিয়ামের বাটি। সেই বাটি হাতে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে চলমান মানুষের দিকে।
কেউ সেই ফ্যালফ্যাল চোখের দিকে তাকিয়ে মায়াভরে পয়সা দিচ্ছেন, কেউ আবার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ট্রেন ঢোকে স্টেশনে। আমি তড়িঘড়ি পকেট থেকে ১০ টাকা বের করি ফেলি বাটিতে, উঠে পড়ি ট্রেনে। মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্ন উঁকি মারতে থাকে। আমি যেন ফিরে গিয়েছি ৪৩ সালে মন্বন্তরে।
ডিজিটাল, স্মার্টফোনের যুগে শীর্ণকায় মা যেন সেই মন্বন্তরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। এত ভোগ, এত আবিষ্কার, এত জৌলুস, এত বৈভব সব বিফলে, যদি না বিবেক সাড়া দেয়। আজ মহাপঞ্চমী সকল মণ্ডপে মা বিরাজমান, বোধনে পড়বে ঢাকে কাঠি। আকাশে-বাতাসে আনন্দের ছোঁয়া। কিন্তু আমার সেই স্টেশনের মা, যার শরীরকে ঢাকার চেষ্টা করছে শতছিন্ন শাড়ি? সেই শিশুগুলো বুঝলো না 'নতুন' কী জিনিস, শুধু জানে দু'মুঠো খাবার। আমরা কি এঁদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারি না? আসুন একবিংশ শতকে আমরা শপথ নিই, কোনও মানুষ যেন নিরন্ন, বস্ত্রহীন না থাকে।