২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ইন্দিরার প্রয়াণ দিবস
CN Webdesk      শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩   Share:   

ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস রবিবার | ৩৭ বছর আগে আজকের দিনেই নিজের দেহরক্ষী সৎবন্ত সিং এবং বিয়ন্ত সিং-এর গুলিতে প্রাণ হারান ইন্দিরা | ১৯১৭ র ১৯ নভেম্বর এলাহাবাদে তাঁর জন্ম | পিতা জওহরলাল নেহরু ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী | একটি স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারে জন্ম হয়েছিল ইন্দিরার | উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেকেই ছিলেন আইনজীবী | পরিবারে শিক্ষার একটি সংস্কৃতি ছিল | ইন্দিরার প্রাথমিক শিক্ষা কনভেন্ট স্কুলে হলেও অবশেষে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে তাঁর কলেজ শিক্ষার প্রাথমিক ভাগ শেষ হয়। 

তিনিই স্বাধীন ভারতে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যিনি বাংলা জানতেন এবং বাঙালির প্রতি তাঁর প্রবল টান ছিল | ৪০এর দশকে তিনিও জড়িয়ে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামে | বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন এবং ব্রিটিশ জেলে থাকার সময় তাঁর টিবির প্রাথমিক রোগ ধরা পড়ে | তাঁকে সুস্থ করতে নেহরু বিদেশের হাসপাতালে পাঠান | ফিরে এসে ফের রাজনীতিতে যোগ দেন | এরপর তাঁর বিবাহ হয় গান্ধীজির পালিত পুত্র ফিরোজ গান্ধীর সঙ্গে | ফিরোজ ধর্মে পড়শি থাকলেও সম্পূর্ণ হিন্দু মতে তাঁদের বিবাহ হয় | তাঁদের দুই পুত্র হয় রাজীব এবং সঞ্জয় |

নেহরুর মৃত্যুর পর ইন্দিরাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসেন এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের দায়িত্ব দেন | ওই সময় রেডিও ও সংবাদপত্রের প্রবল উন্নতি হয় | ১৯৬৬ তে ভারত-পাক যুদ্ধের পর লালবাহাদুর শান্তি চুক্তি করতে রাশিয়ার তাসখন্দে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় | প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে ছিলেন আরেক স্বাধীনতা সংগ্রামী মোরারজি দেশাই। কিন্তু কংগ্রেসের কোর কমিটি দলের অভ্যন্তরে ভোটাভুটির আয়োজন করে সেখানে ইন্দিরা ভোট জিতে প্রধানমন্ত্রী হন | এরপরই কংগ্রেসে ভাঙন শুরু হয় | ১৯৬৯ এ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন নিলাম সঞ্জীব রেড্ডি। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ইন্দিরা বামপন্থী ভিভি গিরিকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনেন | কংগ্রেস ভেঙে যায় | ইন্দিরা টিকে যান সিপি আই-এর সমর্থনে | এরপর ১৯৭১ এ ভোট ডেকে ইন্দিরা বিশাল ভোটে জিতে আসেন | এরমধ্যে ১৯৭১এর গোড়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেন বাংলাদেশকে |

বিরোধী নেতা বাজপেয়ি পর্যন্ত বলেছিলেন, ইন্দিরা আজ দেবী দুর্গা | ১৯৭৫ এ ইন্দিরার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, তিনি ভোটের সময় একটি সংস্থার জিপগাড়ি ব্যবহার করেছিলেন | এলাহাবাদ কোর্টে ইন্দিরা পরাজিত হন | এরপর তিনি জীবনের সবচেয়ে ভুল কাজ করেন পদত্যাগ না করে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন | এর প্রতিবাদ করলে তিনি দেশের সমস্ত বিরোধী নেতাদের জেলে পাঠান | ওই সময় পাঞ্জাবের একটি উগ্রপন্থী দল ধীরে ধীরে উঠে বিরোধী শক্তিকে দুরমুশ করতে থাকে | ১৯৭৭ এ ভোট হলে সদলে ইন্দিরার কংগ্রেস পরাজিত হয় | দেশের প্রধানমন্ত্রী হন জনতা পার্টির মোরারজি দেশাই | কিন্তু ওই দলটি অন্তর্কলহে শেষ হয় যায় |

ফের ভোট আসে ১৯৮০তে। তখন ইন্দিরা নতুন দল করেছেন কংগ্রেস(আই) | ফের বিশাল ভোট জিতে আসেন তিনি | কিন্তু ধীরে ধীরে পাঞ্জাবের ওই উগ্র দল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে | এরই মধ্যে প্লেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ইন্দিরার ছোট পুত্র সঞ্জয়ের | পাঞ্জাবকে ঠান্ডা করতে ইন্দিরা আদেশ দেন, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির, যেখানে উগ্রবাদীরা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে গুলি চালাতে | নির্মমভাবে সুবিশাল শিখ নিধন হয় | এরপর রাশিয়া থেকে ইন্দিরার কাছে বার্তা আসে সতর্ক হওয়ার জন্য | কিন্তু খোলামেলা ইন্দিরা বেপরোয়া ছিলেন | ১৯৮৪ র আজকের দিনে ইন্দিরা নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটে অফিসে যাবার পথে দেহরক্ষী দ্বারা আক্রান্ত হন | গুলিতে নিহত হন ইন্দিরা |

ইন্দিরা চলে গিয়েছেন | কিন্তু আজ ভারতের জনতার কাছে ইন্দিরা মানেই শক্তি । ইন্দিরা গান্ধী আজ রাজনীতির জগতে প্রবাদপ্রতিম । 



Follow us on :