Share this link via
Or copy link
দুঃখ-দারিদ্র এক জিনিস। কিন্তু সোলেমানের জীবন আরও মর্মান্তিক। এমন কাহিনী শুনলে চোখের জলও যেন বাঁধ মানে না। একদিকে খাবার জোটানোর চিন্তা। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী দুই ছেলে। সমস্যার অকুল পাথারে তিনি। যেদিকে পা বাড়াচ্ছেন, সেদিকেই শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার।
উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের সোনাপুর পঞ্চায়েত। সোলেমানের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। জন্মের দু-তিন বছর পর থেকেই সে ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। কথাও ঠিক করে বলতে পারে না। তারপর মেয়ে হয়ে উঠেছে বিয়ের উপযুক্ত। মেয়ের পর রয়েছে এক ছেলে, সেও প্রতিবন্ধী। পরিবারে রয়েছে ছোট্ট একটি মেয়েও। দিনে কাজ করলে জোটে দু'মুঠো খাবার। আর কাজ না করলে উনুন বন্ধ হয়ে যায়। তার ওপর দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে দিশাহার অবস্থা সোলেমানের।
সোলেমান ও তাঁর স্ত্রী সকালে বেরিয়ে পড়েন দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য। মাঠে কাজ করতে গেলেও চিন্তা বাড়িতে রেখে আসা দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে। ছেলেদের বাড়িতে রেখে গেলেও আবার চিন্তা। তারা এবাড়ি-ওবাড়ি গেলেই পাড়ার লোক পাগল বলে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। কষ্ট যেন সীমানা ছাড়িয়েছে সোলেমানের। কাজ না করলে খাবার জোটে না, আবার বাড়ি থেকে কাজে বেরোলেও ছেলেদের চিন্তা যেন কুরে কুরে খায় তাঁকে।
অগত্যা মন সায় না দিলেও বাবা হয়ে তাঁকে এমন কাজ করতে হয়, যা আক্ষরিক অর্থেই মর্মান্তিক। কাজ করতে যাওয়ার সময় ছেলেদের গাছের সাথে কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে যান তিনি। লোকের কথা শোনার ভয়েই এই রাস্তায় পা বাড়াতে হয়েছে তাঁকে। যেখানে খায়, সেখানেই বাথরুম করে ফেলে। এখনও জামাকাপড় পরিয়ে দিতে হয়, খাইয়ে দিতে হয়, স্নান করিয়ে দিতে হয়। এতো বড় ছেলে। কিন্তু প্রতিবন্ধী হয়েও মিলছে না প্রতিবন্ধীর শংসাপত্র, মিলছে না সরকারি কোনও সাহায্যও। এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
সোলেমানের অভিযোগ, তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যকে এই ব্যাপারে জানানো হলে তিনি বলেছেন, ২০ বছর না হলে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র হয় না। সোলেমানকে বলা হয়েছে, তাঁর গ্রামের মানুষের কাছ থেকে আগে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে, তারপরেই শংসাপত্র দেওয়া হবে। এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য যদিও সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। অভিযোগ-পাল্টা জবাবের মধ্যে সোলেমান যেন আরও অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন।